Website Logo

এক ক্লিকে ক্রিয়েশন: লেখালেখি, ভিডিও ও ইমেজের সেরা ৫টি AI টুল

লেখালেখি, ভিডিও এবং ছবি তৈরির জন্য সেরা ৫টি AI টুল

কন্টেন্ট রেডি করতে চাচ্ছেন, কিন্তু বারবার আটকে যাচ্ছেন? ইমেজ, ভিডিও কিংবা লেখালেখির জন্য আইডিয়া মাথায় গিজগিজ করছে কিন্তু আশানুরূপ হচ্ছে না? মনে হচ্ছে আপনার এমন একটা পার্টনার থাকলে বেস্ট হতো যে আপনার আইডিয়া নিয়ে আরও ভালো রেজাল্ট দিবে। 

বর্তমান ডিজিটাল যুগে প্রযুক্তির সবচেয়ে আলোচিত ও রেভোলিউশনারি আবিষ্কারগুলোর একটি হলো AI বা Artificial Intelligence. বাংলায় যাকে আমরা বলি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। তবে এটি এখন শুধু একটি প্রযুক্তি হিসেবে নয়, বরং প্রতিদিনের কাজে মানুষের সহকারী হয়ে উঠেছে। লেখালেখি, ভিডিও প্রোডাকশন, গ্রাফিক ডিজাইন কিংবা ফটো এডিটিং এই সব ক্রিয়েটিভ ফিল্ডেই AI টুলস আমাদের কাজকে করেছে সহজ, দ্রুত এবং অনেক বেশি মানসম্মত। 

যেখানে আগে একটি ভিডিও তৈরি করতে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় লাগতো, এখন AI ভিত্তিক ভিডিও জেনারেট হচ্ছে কয়েক মিনিটেই। ঠিক একইভাবে, একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর ব্লগ লিখতে লেখকের সময় লাগতো হয়তো আধা দিন, সেখানে এখন AI টুলস ব্যবহার করে মিনিটেই মোটামুটি প্রাথমিক খসড়া তৈরি করা যায়। অনেক অসম্ভব কাজ এখন সম্ভব হচ্ছে AI এর মাধ্যমে। তবে লেখালিখি, ভিডিও, গ্রাফিক ডিজাইনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন AI টুলস ব্যবহার করা হয়। এখানে সেরা ৫টি AI টুলের একটি তালিকা দেওয়া হলো যা আপনাকে এই কাজগুলোতে সহায়তা করবে – 

✍ লেখার জন্য AI টুলস

১. ChatGPT 

ChatGPT হলো একটি AI চ্যাটবট, যা OpenAI দ্বারা তৈরি। ChatGPT এমন একটি AI টুল যা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে, লেখালেখি করতে পারে, অনুবাদ করতে পারে, বিভিন্ন বিষয় বিশ্লেষণ করতে পারে এবং আরও অনেক কিছু যেমন-  ব্লগ পোস্ট লেখা, কনটেন্ট রিসার্চ, প্রোডাক্ট ডিসক্রিপশন তৈরি, ক্যাপশন লেখা, SEO ফ্রেন্ডলি আর্টিকেল তৈরি।বর্তমানে ChatGPT বিভিন্ন সংস্করণে পাওয়া যাচ্ছে, যেমন GPT-3.5, GPT-4, এবং সর্বশেষ GPT- 4o. 

২. Gemini

Gemini একটি শক্তিশালী AI মডেল যা Google তৈরি করেছে। এটি মূলত Google-এর নিজস্ব জেনারেটিভ AI প্ল্যাটফর্ম, যেটি আগে Bard নামে পরিচিত ছিল। ব্লগ লেখা, ইমেইল ড্রাফট করা, প্রেজেন্টেশন তৈরি করা, । আপনি যদি কোনো বিষয়ের উপর কনটেন্ট চান, সেটা Gemini আপনাকে নিখুঁতভাবে সাজিয়ে দিতে পারে। ভিডিও স্ক্রিপ্ট বা আইডিয়া জেনারেশন এমনকি কোডিং পর্যন্ত করে দিতে পারে। ডিজিটাল মার্কেটার, কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য বেস্ট। 

৩. Copy.ai 

খুব দ্রুত ও গ্রহণযোগ্য সোশ্যাল কপি তৈরি করা যায় যা ই‑কমার্স, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটারদের জন্য উপযোগী। এটি মূলত কপি রাইটার, ব্লগার, ডিজিটাল মার্কেটার এবং উদ্যোক্তাদের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে তারা কম সময়ে মানসম্মত টেমপ্লেট, টোন কাস্টমাইজ করে মৌলিক কপি জেনারেট করতে পারেন।  

৪. Claude 

এটি ‘Anthropic’ নামক কোম্পানির তৈরি যা দীর্ঘ ডকুমেন্ট পড়ে তা বিশ্লেষণ করতে, সংক্ষেপ করতে এবং জটিল ধারণা ব্যাখ্যা করতে এটি এক্সপার্ট। গবেষণা ও একাডেমিক কাজের জন্য এটি বেশ উপযোগী। গল্প লেখা, কবিতা রচনা, কনটেন্ট আইডিয়া তৈরির মতো ক্রিয়েটিভ কাজেও Claude অত্যন্ত কার্যকর। 

৫. Grammarly

এটি সাধারণত স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইংরেজি লেখার গ্রামার, বানান ও যতিচিহ্নের ভুল চিহ্নিত করে এবং সংশোধনের পরামর্শ দেয়। তবে এর মাধ্যমে জটিল বাক্য সহজ করা, আরও সহজ করে লেখা এবং প্রুফরিডিং সম্ভব হয়। 

🖼️ ছবি তৈরির জন্য AI টুলস  


১. MidJourney

MidJourney-এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এটি ব্যবহারকারীর লেখা (Prompt) থেকে আর্টিস্টিক ও concept- driven ইমেজ তৈরি করতে পারে। এটি Discord-এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যেখানে ব্যবহারকারীরা বট কমান্ড দিয়ে ছবি তৈরি করতে পারে। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কমিউনিটি ভিত্তিক ইন্টার‍্যাকশন সহজ হয় এবং কয়েক সেকেন্ড থেকে মিনিটের মধ্যে ইমেজ রেডি হয়, যা ডিজাইনার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য একটি বিশাল সুবিধা।


২. DALL-E 3 

DALL·E 3 হলো OpenAI-এর তৈরি একটি উন্নত টেক্সট-টু-ইমেজ জেনারেশন মডেল, যা ব্যবহারকারীর লেখা (প্রম্পট) অনুসারে অত্যন্ত বিস্তারিত ও সৃজনশীল ছবি তৈরি করতে সক্ষম। জটিল বা সূক্ষ্ম বিবরণও সঠিকভাবে বুঝে ইমেজ তৈরি করতে পারে। ইমেজ এডিটিং ও করা যায়। 

৩. Canva AI 

সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট, প্রেজেন্টেশন, লোগো এর জন্য Canva AI সর্বাধিক ব্যবহৃত। ডিজাইন ও ইমেজ এডিটিং প্রক্রিয়াকে আরও দ্রুত, সহজ ও দক্ষ করার জন্য টেক্সট, ইমেজ ও প্রেজেন্টেশন সম্পর্কিত একাধিক AI ফিচার একসাথে প্রদান করে। এটি মূলত Canva প্ল্যাটফর্মে সংযুক্ত একাধিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-ভিত্তিক টুলস ও ফিচার। 

৪. Adobe Firefly 

AI চালিত কনটেন্ট জেনারেশন টুল, যা মূলত টেক্সট-টু-ইমেজ, জেনারেটিভ ফিল, টেক্সট ইফেক্ট, এবং ভেক্টর ফিচারের মাধ্যমে ক্রিয়েটিভ ডিজাইন সহজ করে তোলে। এটি মূলত ডিজাইনার, কনটেন্ট ক্রিয়েটর এবং মার্কেটারদের জন্য তৈরি, যারা এক ক্লিকে ইউনিক টাইপোগ্রাফি ও ডিজাইন তৈরি করতে চান। এটি ক্রিয়েটিভ ক্লাউডের (Photoshop, Illustrator ইত্যাদি) সাথে সরাসরি ইন্টিগ্রেট করা। Adobe Firefly নিরাপদ, কপিরাইট-বান্ধব এবং কমার্শিয়াল ইউজের জন্য উপযোগী AI টুল।

৫. Stable Diffusion 

Stable Diffusion একটি ওপেন সোর্স AI মডেল, যা Prompt এর উপর ভিত্তি করে রিয়ালিস্টিক ইমেজ বা ছবি তৈরি করতে সক্ষম। ডিপ লার্নিং ভিত্তিক জেনারেটিভ মডেল। এটি Stability AI ও অন্যান্য সংস্থার যৌথ উদ্যোগে তৈরি। অন্যান্য Text-to-Image মডেলের তুলনায় এটি ফাস্ট, কাস্টমাইজেবল এবং ওপেন সোর্স, তাই ডেভেলপার ও ডিজাইনারদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়।

🎬 ভিডিও কন্টেন্ট তৈরির AI টুলস

১. Runway ML

খুব শক্তিশালী AI ভিত্তিক ক্রিয়েটিভ প্ল্যাটফর্ম এর মধ্যে এটি একটি, যা ডিজাইনার, আর্টিস্ট এবং ভিডিও এডিটরদের জন্য তৈরি। এটি মেশিন লার্নিং মডেল ব্যবহার করে সহজে ভিডিও এডিটিং, ইমেজ জেনারেশন, অ্যানিমেশন এবং অন্যান্য সৃজনশীল কাজ করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে, যারা কোড জানে না বা বুঝে না, সেসব ব্যবহারকারীরা AI টুলসের মাধ্যমে তাদের প্রজেক্টে হাই লেভেলের ক্রিয়েটিভিটি আনার সুযোগ পায়। 

২. Lumen5

এর সবচেয়ে বড় সুবিধা ব্লগ পোস্ট থেকে ভিডিও তৈরি। এর মূল উদ্দেশ্য হলো কোনো ভিডিও এডিটিং অভিজ্ঞতা ছাড়াই খুব দ্রুত এবং সহজে সোশ্যাল মিডিয়া, মার্কেটিং বা অন্যান্য উদ্দেশ্যে মানসম্মত ভিডিও তৈরি করতে সাহায্য করা। এটি টেক্সটকে ভিডিওতে রূপান্তর করে ভিজ্যুয়াল, মিউজিক এবং ভয়েসওভার এড করে এবং কাস্টমাইজেশনের মাধ্যমে ব্র্যান্ডিং বজায় রাখার সুযোগ দেয়।

৩. Synthesys

টেক্সট থেকে হাই-কোয়ালিটি ভিডিও তৈরি করার শক্তিশালী AI ভিডিও জেনারেটর। এটি বিভিন্ন ধরনের হিউম্যান ফিগার এবং ভয়েসওভার এর কাজ করে দেয়। এর মাধ্যমে আপনি জটিল ভিডিও প্রোডাকশনের ঝামেলা ছাড়াই প্রফেশনাল লেভেলের ভিডিও তৈরি করতে পারবেন। কাস্টমাইজেশন অপশনও থাকে যেকারণে ই-লার্নিং মডিউল, পণ্যের ডেমো, নিউজ আপডেট, প্রেজেন্টেশনের জন্য উপযোগী। 

৪. Pictory

এই AI টুলস এর সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট হলো দীর্ঘ ভিডিও ( যেমন- ওয়েবিনার, পডকাস্ট, জুম মিটিং) থেকে ছোট ছোট হাইলাইট ক্লিপ বানানো যা অন্যান্য টুলস থেকে ভিন্ন। অটোমেটিক ভয়েসওভার এড করে আকর্ষণীয় ভিডিও তৈরি করা যায়। এছাড়াও ব্র্যান্ডের লোগো, ফন্ট, কালার এবং ইন্ট্রো/আউট্রো যোগ করে ভিডিওগুলোকে ব্র্যান্ডেড হিসেবে রেডি করা যায়। 

 

৫. InVideo

এর অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর বিশাল টেমপ্লেট লাইব্রেরি যেখানে ৫০০০+ এরও বেশি প্রফেশনালি ডিজাইন করা টেমপ্লেট রয়েছে, যা বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম (যেমন – ইউটিউব, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম) এর জন্য উপযুক্ত এবং এগুলো খুব সহজে কাস্টমাইজও করা যায়। এতে আছে রয়্যালটি-মুক্ত স্টক মিডিয়া ফাইল, যার মধ্যে ভিডিও, ছবি এবং অডিও ট্র্যাক অন্তর্ভুক্ত। এর মূল লক্ষ্য হলো ভিডিও তৈরির প্রসেস সবার জন্য সহজ করা, এমনকি যাদের ভিডিও এডিটিংয়ের পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই, তারাও যেন সহজেই আকর্ষণীয় ভিডিও বানাতে পারেন।


AI যে শুধু সময় ও শ্রম বাঁচাচ্ছে না, বরং একেবারে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে ক্রিয়েটিভ এবং কনটেন্ট প্রোডাকশনকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে। যারা আগে বিশেষ সফটওয়্যার বা স্কিলের অভাবে পিছিয়ে ছিলেন, তারা এখন সহজেই প্রফেশনাল মানের কন্টেন্ট তৈরি করতে পারছেন। একজন ছোট ব্যবসায়ীও এখন তার প্রোডাক্টের জন্য অ্যাড, ভিডিও, এবং ডিজাইন নিজেই তৈরি করতে পারেন। বর্তমানে যারা কন্টেন্ট তৈরির জগতে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চান, তাদের জন্য AI টুলস সম্পর্কে জানা এবং সেগুলোর ব্যবহার আয়ত্ত করা এখন আর বিকল্প নয়, বরং এক অপরিহার্য দক্ষতা।

chat

স্বত্ব © 2025 আইসিটিবাংলা. কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

Trade licence Number TRAD/DNCC/002367/2024